ভারতে খেলাফত আন্দোলন হলেও আরবে কিন্তু এমন কোনো আন্দোলন হয়নি। বরং তারা অ্যারাবিজমকেই প্রাধান্য দিয়েছে৷ যার প্রায়শ্চিত্ত আরবরা শত বছর ধরে করছে। বিশেষত ফিলিস্তিনি আরবরা এর ভুক্তভোগী সবচেয়ে বেশি। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ার বিষয়ে এবং ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার লক্ষে চেষ্টা করেন তৎকালীন জেরুজালেমের গ্রান্ড মুফতি আমিন আল হুসাইনী।১৯২৮ সালে তিনি বৃটিশদের উদ্দেশ্য এক চিঠিতে লেখেন, ইহুদিরা যেন জেরুজালেমের প্রতি তাদের লোভাতুর দৃষ্টি পরিত্যাগ করে। বৃটিশরা এই স্বাধীনতাকামী ব্যক্তিকে ঘুষ দিয়ে তাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে কাজ হয় নি। তিনি আমৃত্যু স্বাধীন ফিলিস্তিন গড়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
১৯৩৩-৩৫ সাল পর্যন্ত ইহুদিদের সাথে আরবদের সংঘাত চলতে থাকে। এ সংঘাতে মারা যান ফিলিস্তিনি নেতা ইজউদ্দীন কাসসাম (এই নামে হামাসের একটি বিশেষায়িত ব্রিগেড আছে)। এতে ইহুদিদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনরা আরো ফুসে ওঠে। কিন্তু বৃটিশদের প্রত্যক্ষ মদদে ইহুদিরা ক্রমেই ফিলিস্তিন ভূমি দখল করতে থাকে।
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জার্মানির হিটলার ব্যাপকভাবে ইহুদি নিধন শুরু করে। তার সহযোগী ছিলেন ইতালির মুসোলিনী। আমিন আল হুসাইনী এই সুযোগ কাজে লাগাতে ছুটে যান ইহুদি বিদ্বেষী হিটলারের কাছে। স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠায় তার সহযোগিতা চান। মুসোলিনীর সাথেও দেখা করেন এই দাবি নিয়ে। ইতালি প্রথমেই আরবদের প্রতি সমর্থনে বিবৃতি দেন। হিটলার প্রথমদিকে বিবৃতি না দিলেও বৃটিশদের বিরুদ্ধে অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে ১৯৪২ সালে আরবদের পক্ষে বিবৃতি প্রদান করেন। এতে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার আশা সঞ্চারিত হয়।
কিন্তু হিটলারের জোটের পতনে তা মুখ থুবড়ে পড়ে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমিন আল হুসাইনী মিশরে চলে যান। সেখানে তিনি নতুনভাবে ছক আঁকেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়। আরব রাষ্ট্রগুলোকে একত্রিত করেন মিশরের কায়রোতে। একটি যৌথ আরব বাহিনী তৈরি করেন। যারা ফিলিস্তিনে লড়াই করবে। লেবাননে আরেক আহুত আরব লীগ সম্মেলন করেন যখন জাতিসংঘ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার পর আরবদের সাথে যুদ্ধ বেধে যায়। কিন্তু স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বপ্ন অধরাই রয়ে যায়। চলবে...
লেখক: প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
© 2023 | All Right Reserved | Developed By WebGet